Biography of Sufi Saint Anwarul Huq

চিরঞ্জীব সূফী সাধক আনোয়ারুল হক

Chanpur Sharif

সুবিশাল জগৎ সংসারে অনন্ত গতিময় জীবন প্রবাহে সৃষ্টির বৈচিত্র্যময়তা রয়েছে অক্ষুন্ন। পৃথিবীও নিজস্ব নিয়মে অব্যাহত রেখেছে এই ধারা। এখানে জীবন আসে জীবন যায়। ফেনায়িত সৃষ্টি-সাগরে সামান্য বুদবুদ সমান অস্তিত্ত্ব নিয়ে প্রতিটি মানুষ আসে এবং যায়। তবু এই সাধারণ নিয়মটাকে ব্যতিক্রমে বিভাসিত করেন কেউ কেউ। তফাতটা শুধু অস্তিত্বের দীর্ঘস্থায়ীত্বের অর্থাৎ সময়ের। এর পেছনের মূল যে সত্য প্রধান ভূমিকা রাখে তা হচ্ছে ‘কল্যাণ-ব্রত’। ‘অন্যের জন্যে আমি’ – এই কর্ম-সাধনায় তাঁরা অতিবাহিত করে যান সমগ্র জীবন। কল্যাণিত জীবন সমষ্টিই তাই ঋণী চেতনায় ‘একক জীবন’-কে ধরে রাখে। আত্মশক্তিতে ও সত্যে তাঁরা অধিকার করে নেন অনুগত জীবনের উপাচার। ‘একক জীবন’-কে ঘিরে বিচিত্র জীবনের যে সমাগম, তাদের কেউ সত্যকে, কেউবা শক্তিকে গ্রহণ করেন। স্বার্থের সংশ্লিষ্টতা থাকলেও দু’য়ের কাছেই তিনি উপনীত হন মহাপ্রাণ-এ। দু’য়ের কাছেই তিনি হন স্তুতির ‘রূপ’। রূপ থেকে রূপান্তরে যাত্রা তাই সেই সব ‘মহাপ্রাণ’-দেরকে ক্ষয়িষ্ণু সত্তায় নয় বরং ক্রমশ জীবন্ততর করে তোলে সময়ের অভিযাত্রায়। এই ধূলি-ধরা থেকে লোকান্তরিত এমনই এক মহাপ্রাণ – ‘সুলতানুল আউলিয়া আলহাজ্ব হযরত শাহ্ কলন্দর সূফী খাজা আনোয়ারুল হক রওশন জমির মাদ্দা জিল্লাহুল আলী’। মানবতার মহান সাধক তিনি। তথাকথিত ধর্ম-ধারণা থেকে সম্পূর্ণরূপে এক ভিন্ন ও মূল সত্যে প্রতিষ্ঠিত ধর্মবোধকে পুনরুজ্জীবিত করে তিনি আত্মোৎসর্গ করেছেন মানুষেরই কল্যাণ-ব্রতে।

বিরল ব্যক্তিত্ব আগমনেই রেখে থাকেন আগামীর ইঙ্গিত। খুব সাধারণ ধারায় ঘটে না তাঁদের আগমন বা আবির্ভাব। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে তাঁরা অভিবাদন গ্রহণ করেন পৃথিবীর, প্রকৃতির। জননী ও জনকের নিবিড় আকাঙ্খার সাত্ত্বিক প্রকাশ হয়ে তাঁদের প্রথম কান্না ধ্বনিত হয় জাগতিক বলয়ে। সূফী সাধক খাজা আনোয়ারুল হক-ও আবির্ভূত হন এই ধারায় মা-বাবার বহু আকাঙ্খার বহু সাধনার ধন রূপে। তাঁর মায়ের কন্ঠেই ধ্বনিত হয়েছে সেই সত্য – ‘ওকে আমি মাজারে মাজারে ঘুরে পেয়েছিলাম।’ তিনি ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন কলকাতার হ্যারিসন রোডে দুই তলা বাসার পশ্চিমের ঘরে।

অবিভক্ত বাংলায় ১৯৩৬ সালে। বাংলা সন হিসেবে ১৩৪৩-এর ১৭ অগ্রহায়ণ, বুধবার সকাল ১১টায়। বাবা মজর উদ্দিন ভূঁইয়া ও মা ছায়েদা আখতার – দীর্ঘদিন বিভিন্ন পীর-ফকির,মাজার-দরবার, দান-দক্ষিণার পর লাভ করেন তাঁকে। কিন্তু দুর্লভ এই সন্তান দুর্লভই হয়ে রইলেন জগতের বুকে।

অবিভক্ত বাংলার রাজধানী কলকাতায় আবির্ভূত হয়ে তাঁর মন-মানসিকতাও শৈশব থেকে ছিল রাজসিক। রাজধানীর বিলাসপূর্ণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা এই মহান সাধক পরিবারের সাথেই দেশ বিভাগের সময় বাপ-দাদার ভিটেতে চলে আসেন বাংলাদেশে অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কিশোরগঞ্জে। পিতার পথ অনুসরণ করে তিনিও আয়ের উৎস হিসেবে বেছে নেন ব্যবসা। কিশোরগঞ্জ শহরেই ছিল তাঁর কাপড়ের দোকান। স্বাধীনচেতা মানুষকেই সচরাচর ব্যবসাকে অবলম্বন করতে দেখা যায়। চাকরি করা মানেই অন্যের গোলামী করা – তিনি নিজেই তা বলতেন। আজীবন তিনি স্বাধীন জীবনযাপন করেছেন। আপন ভূবনে আপনিই বাদশাহী করেছেন।
সংসারের জটিল আবর্তে তিনি বাঁধা পড়ে থাকেননি। যদিও পারিবারিকভাবেই তিনি বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন ষাট দশকে (সম্ভবত ১৯৫৫/৫৬ সালে)। দাম্পত্য জীবনে তিনি ছিলেন আদর্শ স্বামী। যোগ্য স্ত্রীর সংস্পর্শে তিনিও তাঁর সাধনার গতিপথকে ত্বরান্বিত করতে পেরেছেন। দু’জনার মধ্যে কখনও বিবাদের ছোট খাটো অংশও প্রকাশ পায়নি। সংসার উদাসীন তিনি অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন মাজার-দরবার ঘুরতেন। বিশাল সম্পত্তির মায়া ছিন্ন করে তিনি বাইরে বাইরে ঘুরতেন অন্তরে প্রোথিত সত্য সন্ধানী সত্তার উদ্বেলতায়। প্রচুর অর্থও নিজে দু’হাতে নিঃসঙ্কোচে ব্যয় করেছেন এ পথেই। অবশেষে তাঁর অনুসন্ধিৎস্যু মন খুঁজে পেলো তাঁর কাঙ্খিত আশ্রয়। আত্মবিকাশের সঠিক মাধ্যম। দর্শন পেলেন, আত্মসমর্পিত হলেন কিশোরগঞ্জস্থ কুলিয়ারচর থানার ফরিদপুর শরীফের ‘কান্দুলিয়ার মৌলভী’ অর্থাৎ হযরত আবু আলী আক্তারউদ্দিন শাহ্ কলন্দর গউস পাক্-এঁর শ্রী চরণে। গউস পাক তাঁর হাতে তুলে দিলেন হাক্কানী দর্শন। নিখাদ প্রেমের তরী ভাসালেন গউস পাক-এঁর হৃদয় সাগরে। কর্ম ও ত্যাগের সাধনায় তাঁর একনিষ্ঠতা তাঁকে মুক্তির সনদ এনে দিল।

পরশ পাথরের পরশে ‘ভাটির ছেড়া’ (তাঁর হুজুর তাঁকে এ নামেই ডাকতেন) হলেন স্বতন্ত্র এক পরশ পাথর। সাধনার এই পর্যায়ে বৈশ্বিক মানবতার অনুধ্যান নিয়ে তিনি হলেন সংসার ত্যাগী। তবে পরিবারে তখন তাঁর মা, স্ত্রী, ছেলেরা বা ভাই-বোনদের কারো প্রতিই তিনি অবিচার করেননি। ব্যবসা-সম্পত্তি সব ছোট ভাই আজিজুল হক বাচ্চুর হাতে দিয়ে দেন। স্ত্রীকে পূর্ব থেকেই ইঙ্গিত দিয়ে মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখেন। আর তাঁর মা তো জানতেনই যে – ‘ওর বয়স যখন এক বছর তখন এক সাধক ওকে দেখে বলেছিলেন, ‘মা’ তুই এ ছেলেকে কোন বন্ধন দিয়েই ধরে রাখতে পারবি না।’ সাধনার সন্তান হারালো সাধনায়। মাতৃভক্তি ছিল তাঁর চরম। তাঁর যারা অনুসারী বা তাঁর কাছে যারাই আসতেন তিনি তাঁদেরকে ‘মা’-এর প্রতি অনুরক্ত হতে উপদেশ দিতেন। তিনি বারবারই বলতেন যে, মায়ের ঋণ কখনো শোধ করা যাবে না।

গউস পাক্ বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁকে খাঁটি পরশ পাথরে পরিণত করেছেন। সে সব অনেক ঘটনাই তিনি বলেছেন। যা ‘বর্তমান সংলাপ’ পত্রিকাতেও প্রকাশিত হয়েছে ইতোপূর্বে। অনেকেরই জানা আছে সে সব ঘটনা। জানা যায়, শাহ্ সূফী হওয়ার পর তিনি প্রথম অবস্থান করেন ছাতিরচরে। অতঃপর সেখান থেকে তিনি এলেন রাজধানী ঢাকার নারিন্দা ভুতের গলিতে। সেখানে কিছুদিন থাকার পর তিনি ধানমন্ডিতে অবস্থান নেন। সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বিলাস বহুল রাজধানীতে যাঁর জন্ম রাজধানীতেই তাঁর লোকান্তর। যদিও তফাৎটা এপার বাংলা – ওপার বাংলা। ঢাকার বিলাস বহুল ধানমন্ডিতে তিনি হাক্কানী খানকা শরীফ স্থাপন করে তাঁর মুর্শিদের হুকুমেই তিনি গড়ে তোলেন তাঁর রাজত্ব। কিন্তু শুধু ঢাকা কেন্দ্রিকই ছিল না তাঁর কর্মসাধনা, দেশ তথা উপমহাদেশ তথা সমগ্র এশিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অঞ্চলে ছড়িয়েছেন তাঁর সাধনার দীপ্তি। গ্রামে-গঞ্জের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে মানবতার ধর্মকে প্রসারিত করে দিয়েছেন। ভাববাদী ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে তিনি ধর্মান্ধতাকে কখনোই প্রশ্রয় দেননি। তাঁর সংস্পর্শে যিনি এসেছেন তিনিই উপলব্ধি করতে পেরেছেন প্রকৃত ধর্মের স্বরূপ।

ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করতে সারা দেশব্যাপী তিনি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময়ে স্থাপন করেছেন হাক্কানী খানকা শরীফ, আস্তানা শরীফ, দরবার, হাক্কানী কমপ্লেক্স প্রভৃতি। তাঁর আশীর্বাদপুষ্ট হাক্কানী মিশন বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠা সেই একই লক্ষ্যে – ‘ধর্ম মানবতার জন্য, ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থের জন্য নয়’। হাক্কানী মিশন বিদ্যাপীঠ, হাক্কানী মিশন মহাবিদ্যালয় – তাঁর শিক্ষানুরাগকেই প্রকাশিত করে। বর্তমান হলুদ সাংবাদিকতার জগতে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে নির্ভীক হওয়ার জেহাদে রত, সৃজনশীল ও আত্মিক সেবা সহায়তা দানের অভিপ্রায়ে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক বর্তমান সংলাপ’ তাঁর যুগোপযোগী আধুনিক চিন্তা-চেতনাকেই প্রতিভাত করে। তাঁর আশীর্বাদে পুষ্ট হয়েই ‘বর্তমান সংলাপ’ দৈনিকের পথে পদার্পণ করবে একদিন। কেননা একাধিকবার তিনিই একথা বলেছেন।

ধর্মের গোঁড়ামিকে তিনি কখনও প্রশ্রয় দিতেন না। ‘সূফীতত্ত্ব সাধনার’ উন্মুক্ত চিত্ত বলয়ে তাঁর পরিভ্রমণ। শুভ্র বসনে সজ্জিত হয়ে যে শাহানশাহীতে তিনি থাকতেন, তা কারো কারো কাছে প্রশ্নবোধক হয়ে দেখা দিতো। কিন্তু যিনি তাঁর সঙ্গ লাভ করেছেন তিনিই দেখেছেন বাহ্যিক আবরণের আড়ালে তাঁর ত্যাগের চরমতম নিদর্শন।
ভক্তবৃন্দদের উপহার, উপাচার তিনি কখনোই ব্যক্তি স্বার্থে কুক্ষিগত করেননি। বরং তিনি মর্জি মাফিক তা বিলিয়ে দিয়েছেন ভক্তদের মাঝে। যে পুঁরুষ সবকিছু ছেড়ে দিয়ে এক আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সাধনায় নিবেদিত, তাঁকে আর কী করে টানতে পারে জাগতিক সম্পত্তির মোহ? আত্মোন্নতির চরমতম পর্যায়ে উন্নীত হতে তিনি মজ্জুব অবস্থায়ও থেকেছেন। পথে পথে, নদীর ঘাটে নিজের সাধনায় একাগ্রচিত্তে মশগুল থাকতেন। খাওয়া-দাওয়া তুচ্ছ জ্ঞান করে ‘এক আল্লাহ্র’ ধ্যানে নিমগ্ন থেকেছেন তিনি। তাঁকে এক সপ্তাহ পর্যন্তও কোনো কিছু না খেয়ে থাকতে দেখেছেন অনুসারীদের মধ্যে কেউ কেউ। ভক্তদের আনা বিচিত্র রকমের অভিজাত খাবার সামনে থাকলেও কখনই তিনি পেট ভরে তা খেয়েছেন বলে শোনা যায় না। খুব সামান্যই তিনি খেতেন। ঘুমের ক্ষেত্রেও তাঁর নিয়ন্ত্রণ পুরোমাত্রায়। তাঁর সাথে রাত জেগেছে এমন অনেককেই বলতে শোনা যায় তিনি আদৌ ঘুমাতেন না। অর্থাৎ নিজের প্রতি নিজের নিয়ন্ত্রণ ছিল তাঁর পুরোপুরি। আল্লাহর শক্তিতে শক্তিমান যিনি তাঁর কাছে অন্য কোনো বিরুদ্ধ শক্তিই কি প্রভাব ফেলতে পারে?

সফর প্রিয় ছিলেন তিনি। অধিকাংশ সময়ই তিনি সফরে সফরে থাকতেন। কখনো গাড়িতে, কখনো নৌকায়, কখনো পায়ে হেঁটে তিনি সফর করেছেন দেশের আনাচে-কানাচে। তাঁর প্রতিটি সফর ছিল কার্যকারণ সম্পর্কিত। ধর্মকে কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তিনি শিক্ষা দিয়েছেন – ‘নিজের বিচার নিজে করো রাত্র-দিনে।’ আত্মবিশ্লেষণের সূক্ষ্মতায় আত্মোন্নয়নের পথে অভিযাত্রী রূপে গড়ে উঠতে তিনি দীক্ষা দিয়েছেন তাঁর অনুসারীদেরকে।
ভালবাসায়, স্নেহে, আদরে – আপ্যায়নে, আতিথেয়তায় তাঁর তুলনা চলে না। অনেকেই তাঁর কাছে আসতেন এসবেরই টানে। শুধু ধর্মীয় শিক্ষাই নয়, জাগতিক কর্মানুশীলনের মাধ্যমেও তিনি অনেককেই দিয়েছেন নতুন জীবনের সন্ধান। তাঁর প্রতিটি কথায়, চলাফেরায়, ভঙ্গিমায়, চাহনিতে তিনি শিক্ষণীয় ইঙ্গিত রেখেছেন। যে যেভাবে বুঝেছে সে সেভাবেই তা গ্রহণ করেছে। দরবারি আদব ও তাঁর হুকুম যথাযথ পালন করতে পারলে অনেক মকসুদিই তার সমস্যার সমাধান করিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছে। আত্মপ্রচার বিমুখ ছিলেন বলেই ওলিকুল শিরোমণি হয়েও তিনি নিভৃতচারী জীবনযাপন করেছেন। ‘মন চাইলে আইসেন’ – সূত্রে তাই তিনি আগন্তুকদের আহ্বান জানাতেন। কখনই তিনি নিজের সুপ্ত সাধন-ভান্ডার যেচে কারোর সামনে প্রচার করেননি। তাঁর শিক্ষাই হচ্ছে ‘ধনবান হও, প্রকাশিত হয়ো না’। যিনি তাঁর একান্ত অনুগ্রহের পাত্র শুধু তিনিই তাঁর প্রকৃত পরিচয় জানতে পেরেছেন।

২০ শ্রাবণ ১৪০৬, ৪ আগস্ট ’৯৯ বুধবার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে তিনি লোকান্তরিত হন। মা-ভক্ত সাধক-সন্তান মায়ের মৃত্যু তারিখকেই বরণ করে নিলেন নতুন পথে যাত্রার। পরিশেষে মায়ের পাশেই শায়িত হলেন তিনি। কিশোরগঞ্জ জেলার চাঁন্দপুর গ্রাম আজ এই মহাপ্রাণের স্পর্শে পুনরুজ্জীবন লাভ করে হয়েছে ‘চাঁন্দপুর শরীফ’। কল্লোলিত হয়ে উঠেছে তাঁর প্রেমিক, ভক্ত ও মকসুদিদের সমাগমে। এক মহামিলন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে চাঁন্দপুর শরীফ। এর ব্যাপ্তি দিনে দিনে প্রসারিত। জাগতিক দৃষ্টির আড়ালে লুকিয়ে থাকা সূফী সাধক আনোয়ারুল হক আজ অন্তরালে থেকেই নিজেকে প্রকাশিত প্রসারিত করছেন বিশ্বাসীদের অন্তরে ও চিন্তাপ্রবাহে। বিশ্বাসীদের কাছে তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী এক মহাপ্রাণ, যিনি অবশ্যই প্রশংসার সর্বোচ্চ শিখরে অধিষ্ঠিত ছিলেন-আছেন-থাকবেন।

 

সূফী সাধক আনোয়ারুল হক এঁর কয়েকটি মূল্যবান বাণী

 

* নিজের বিচার নিজে কর রাত্রদিনে।

* সাবধান। হাসতে, খেলতে, দেখতে আর বলতে ঈমান চলে যেতে পারে।

* তুমি সেই ফুল হও – যে ফুল প্রস্ফুটিত হয় কিন্তু ঝরে যায় না।

* যে ব্যক্তি মুর্শিদের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে না, সে দ্বীনের কাজ করতে পারে না।

* আল্লাহর স্বভাব মোতাবেক নিজের স্বভাব তৈরী করলে আল্লাহর পরিচয় লাভ হবেই।

* মুর্শিদ দর্শনের মাঝে আত্মদর্শন। আর আত্মদর্শনের মাঝে আল্লাহ্ দর্শন।

* মনে রেখো কেহ কোন কাজে লেগে থাকলে মেগে খায় না।

* প্রশংসাকারী হও তাহলে প্রশংসিত হতে পারবে।

* মুর্শিদের প্রতি প্রেম, বিশ্বাস ও সমর্পণ যত অধিক হবে ততো তোমার অহংকার কমে যাবে।

* প্রত্যেক ব্যক্তিই তার স্বীয় কর্মের মধ্যে আবদ্ধ থাকিবে।

* এহ্সানের প্রতিদান এহ্সান ব্যতীত অন্য কিছু কি হইতে পারে?

* জ্ঞানী-গুণীজন কারো মন্দ গায় না – বিপথগামীও করে না, যারা বুঝে না তারা অজ্ঞ, শিক্ষিত হলে হবে কি।

* স্বীয় জিহ্বা শাসনে রাখো – পলকে পলকে মুর্শিদ দেখো।

* ভোগের আনন্দ সাময়িক – ত্যাগের আনন্দ চিরন্তন।

* বিপদে ধৈর্যশীল হও, অন্যের দোষ ক্ষমা করো তাহলে তুমিও আল্লাহ্র দরবারে ক্ষমা পাওয়ার প্রার্থী হতে পারবে।

* মুর্শিদের হুকুম অনুসারে নিজের স্বভাব পরিবর্তন করার যুদ্ধে সর্বদা নিয়োজিত থাকা উত্তম এবাদত।

* আল্লাহ্কে পাবার জন্য শেষ রক্ত বিন্দু নিয়ে প্রস্তুত থাকো তাঁর হুকুমে দান করার জন্য।

* শরীয়ত ও তরিকত একত্রে মিশিয়ে ডুব দিলে আল্লাহ্র প্রেমে নিমগ্ন থাকা যায়।

* জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মিথ্যাকে ধ্বংস এবং সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্রতী হওয়ার জেহাদে রত  থাকলে আত্মিক উন্নতি হবেই হবে।

* বিশ্বাসের সু-বাস উড়ে গেলে বিশ্বাস হয়ে যায় বিষ।

* চরিত্রহীন আলেমের সংসর্গ হতে চরিত্রবান দুনিয়াদার লোকের সংসর্গ অনেক ভাল।

* বিশ্বাস ঘাতকেরাই নিজ নিজ কামনায় ধরা পড়ে।

* আমিত্বের আবরণ দূর করার প্রচেষ্টার অপর নাম এবাদত।

* বারবার মৃত্যু, বারবার জন্ম; এতে আছে আনন্দ কেউ জানে না মর্ম।

* ‘না’ দিয়ে পৃথিবী ধ্বংস করা যায়, ‘না’ দিয়ে নতুন সৃষ্টি করা যায় যদি বোঝা যায় ‘না’ এর মর্মকথা।

* তারা ইসলামের আলোকে দেখিতে পায় নাই, যারা আল্লাহ্র জন্য লালায়িত নয়।

* যে অচল হয়ে পৃথিবীতে চলে তার কাছে অচল পয়সার দাম আছে।

* যার প্রেমের শুরু নেই, শেষও নেই তার প্রেম কাঁচা।

* দরবারে এসো আশেকান হিসাবে, নারী-পুরুষ হিসাবে নয়।

* যে ব্যক্তি মনে ও মুখে এক নয় তার এবাদত শুদ্ধ নয়।

* সরলে গরল মিশাইও না, গরলে সরল মিশাইও না।

* ভাতের নিচে কৈ মাছ, আমি কৈ মাছ তালাশ করে বেড়াই।

* আম গাছে কাঁঠাল হয় না, কাঁঠাল গাছে আম হয় না।

* ক্ষেতের ইটা ক্ষেতেই ভাঙ্গতে হয়।

* বিরক্তি সরাসরি প্রকাশ না করে আচরণ দিয়ে বুঝানো উত্তম।

* প্রয়োজন মাফিক সহানুভূতি ব্যক্ত করাই ভালো।

* অসুবিধায় সহনশীলতা কাম্য।

* ত্রুটি ও অক্ষমতা অকপটে স্বীকার করে উন্নতির চেষ্টা করা উত্তম পন্থা।

* কর্ম ও চিন্তায় সমন্বয় ঘটানো বুদ্ধিমানের কাজ।

* ত্রুটিপূর্ণ আচার-আচরণ বর্জন করে ভদ্র আচরণ করতে হবে।

* যুক্তি নির্ভর বক্তব্য সবার কাছে প্রিয় ও শিক্ষণীয়।

* সুজন, কুজন আর আপনজন – এই নিয়ে হয় জীবনযাপন।

* এসেছিলাম অন্ধকারে, থাকতে আঁধার যাবো চলে।

* অভাব নয়, অজ্ঞতাই সকল ভূলের মূল।

* যেটুকু সময় তুমি নিজেরে ধরে রাখো, সেটুকু সময় তোমার থাকবে খুব ভালো।

* দর্শন ও উপলব্ধিতে হয় সত্য, অন্যের কথায় নয়।

* কৃতিত্ব সেখানে, যেখানে মুখের ভাষাকে আয়ত্বে রাখা যায়।

* মানুষ যদি হতে চাও, মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করো।

* মুর্শিদ আমি খুঁজবো নাকো বন-জঙ্গলে যাইয়া, আমার মাঝে আমার মুর্শিদ আছে যে পথ চাহিয়া।

* অসময়ে মাশকলাই ক্ষেত বুনে কত ড্যাহা বাছুরের দেখলাম নাচ।

* মানুষ কখনো কাহাকেও অভিশাপ দেয় না।

* বেশি কিছু ভালো নয়, বেশির কাছে কম না থাকিলে বেশির কি আর মূল্য রয়।

* ধুপী যখন সেজেই গেছি, সবার কাপড় কাচতে হবে।